পবিত্র উশর আদায়ের ফযীলত : পবিত্র যাকাত আদায় করলে যেমন সম্পদ বৃদ্ধি পায় এবং পবিত্র হয়, ঠিক তেমনি পবিত্র উশর আদায় করলেও ফসল, ফল-ফলাদি বৃদ্ধি পায় ও পবিত্র হয়। সাথে সাথে বিভিন্ন প্রকার দুর্যোগ যেমন- ঝড়-তুফান, বন্যা-খরা, পোকা-মাকড়ের আক্রমণ ইত্যাদি থেকেও ফসল ও ফল-ফলাদি হিফাযত হয়। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ-এ কুদসী শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اَنْفِقْ يَا اِبْنَ اٰدَمَ اُنْفِقْ عَلَيْكَ
অর্থ : “হে আদম সন্তান! তুমি (আমার রাস্তায়) খরচ তথা ব্যয় করো; আমি তোমাকে (তোমার চাহিদা মুতাবিক) দান করবো।” (পবিত্র বুখারী শরীফ ও পবিত্র মুসলিম শরীফ)
পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছেন-
فَمَنْ تَطَوَّعَ خَيْرًا فَهُوَ خَيْرٌ لَّه
অর্থ : “যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কোন নেক কাজ করে, তা তার জন্য কল্যাণ বা বরকতের কারণ হবে।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৮৪)
যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে পূর্ববর্তী (বণী ইসরাঈল) যামানার একটি ঘটনা বর্ণিত রয়েছে। তা হলো, “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, এক ব্যক্তি এক মাঠে অবস্থান করছিলেন। এমন সময় তিনি মেঘের মধ্যে একটি শব্দ মুবারক শুনতে পেলেন যে, অমুকের বাগানে পানি বর্ষণ করো। অতঃপর মেঘমালা সেই দিকে ধাবিত হলো এবং সেই বাগানে পানি বর্ষালো। তখন দেখা গেলো, উক্ত বাগানের নালাটি সমস্ত পানি নিজের মধ্যে ভর্তি করে নিলো। তখন সেই ব্যক্তি মেঘের অনুসরণ করলেন অর্থাৎ যেখানে পানি বর্ষিত হয়েছিলো সেখানে তিনি গেলেন এবং গিয়ে দেখলেন যে, এক ব্যক্তি উনার বাগানে দাঁড়িয়ে সেচুনী দ্বারা পানি সেচতেছেন। তখন তিনি উনাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার বান্দা! আপনার নাম কী? তিনি বললেন, আমার নাম অমুক- যে নাম মুবারক তিনি পবিত্র মেঘের মধ্যে শুনেছিলেন সে নাম মুবারক। তখন ওই ব্যক্তি বললেন, হে আল্লাহ তায়ালা উনার বান্দা! আপনি কেন আমাকে আমার নাম জিজ্ঞাসা করলেন? তিনি বললেন, যে মেঘের এ পানি সে মেঘের মধ্যে আমি একটি শব্দ মুবারক শুনেছি। আপনার নাম নিয়ে বলা হয়েছে যে, অমুকের বাগানে পানি বর্ষণ করো। তিনি আরো জানতে চাইলেন, হে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার বান্দা! আপনি বলুন, আপনি ফসলের দ্বারা কী কী কাজ করে থাকেন। তিনি উত্তরে বললেন, যখন আপনি জানতে চাইলেন তখন শুনুন, আমার এই জমিতে যা ফলে তা আমি (আমাদের সম্মানিত শরীয়ত মুতাবিক) তিন ভাগ করি। এক ভাগ দান করি, এক ভাগ আমি ও আমার পরিবারের খাবারের জন্য রাখি এবং অপর ভাগ ফসল উৎপাদনের জন্য লাগিয়ে থাকি।” (পবিত্র মুসলিম শরীফ, মিশকাতুল মাছাবীহ কিতাবুয যাকাত বাবুল ইনফাক্বা ওয়া কারাহিয়াতিল ইমসাক)
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, কেউ যদি যমীন থেকে উৎপাদিত ফসল ও ফল-ফলাদির যথাযথ হক্ব আদায় করেন তথা পবিত্র দান-ছদকা করেন তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি কুদরতীভাবেই উনার ফসলের হিফাযত করেন এবং উনার ফসলে বরকত দান করেন। উনার ফসল কখনো নষ্ট হবে না। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র উশর আদায় না করার শাস্তি : হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্পদ বা ফসল দান করেন আর সে তার পবিত্র যাকাত বা পবিত্র উশর আদায় করেনি কিয়ামতের দিন তার সম্পদকে টেকো মাথা সাপ স্বরূপ বানানো হবে, যার চক্ষুর উপর কিসমিসের দানার মতো দুটি কালো বিন্দু থাকবে। কিয়ামতের দিন সাপটাকে তার গলায় বেড়ি স্বরূপ পড়ানো হবে। অতঃপর উক্ত সাপ তার মুখের দু’দিকে কামড় দিতে থাকবে আর বলবে, আমি তোমার সঞ্চিত সম্পদ আমি তোমার মাল। (পবিত্র বুখারী শরীফ)
অতএব, প্রত্যেক ব্যক্তিরই উচিত যমীনে উৎপাদিত ফসলের পবিত্র উশর আদায়ের মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের পবিত্র মত মুবারক অনুযায়ী মত ও পবিত্র পথ মুবারক অনুযায়ী পথ হয়ে হাক্বীক্বী রিযামন্দী ও সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করা।
পবিত্র উশর আদায়ের উদাহরণ : কারো যমীনে পরিশ্রমের মাধ্যমে ৫০ মণ ধান উৎপন্ন হলো তিনি নিছফু উশর অর্থাৎ বিশ ভাগের ১ ভাগ পবিত্র উশর প্রদান করবেন, অর্থাৎ আড়াই মণ ধান দান করবেন। আর যদি বিনা পরিশ্রমে উৎপন্ন হয় তাহলে পবিত্র উশর তথা দশ ভাগের একভাগ ধান দান করবেন, অর্থাৎ ৫ মণ ধান পবিত্র উশর হিসেবে আদায় করবেন।
পবিত্র উশর আদায় না করার শাস্তি : হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্পদ বা ফসল দান করেন আর সে তার পবিত্র যাকাত বা পবিত্র উশর আদায় করেনি কিয়ামতের দিন তার সম্পদকে টেকো মাথা সাপ স্বরূপ বানানো হবে, যার চক্ষুর উপর কিসমিসের দানার মতো দুটি কালো বিন্দু থাকবে। কিয়ামতের দিন সাপটাকে তার গলায় বেড়ি স্বরূপ পড়ানো হবে। অতঃপর উক্ত সাপ তার মুখের দু’দিকে কামড় দিতে থাকবে আর বলবে, আমি তোমার সঞ্চিত সম্পদ আমি তোমার মাল। (পবিত্র বুখারী শরীফ)
অতএব, প্রত্যেক ব্যক্তিরই উচিত যমীনে উৎপাদিত ফসলের পবিত্র উশর আদায়ের মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের পবিত্র মত মুবারক অনুযায়ী মত ও পবিত্র পথ মুবারক অনুযায়ী পথ হয়ে হাক্বীক্বী রিযামন্দী ও সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করা।