পবিত্র যাকাত উনার ফাযায়িল-ফযীলত

পবিত্র যাকাত উনার ফাযায়িল-ফযীলত - এই সংক্রান্ত মুল্যবান নছীহত

৫টি স্তম্ভের ৩য় বা মধ্যবর্তী স্তম্ভ, যা ছাড়া দ্বীন ইসলাম নামক ঘর টিকবে না।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
بُنِيَ الإِسْلاَمُ عَلَى خَمْسٍ: شَهَادَةِ أَنْ لاَ إلهَ إِلاَّ اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّداً رَسُولُ اللهِ، وَإقَامِ الصَّلاَةِ، وَإيْتَاءِ الزَّكَاةِ، وَحَجِّ الْبَيْتِ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ
অর্থ : সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন পবিত্র ইসলাম উনার ভিত্তি পাঁচটি যথা- (১) সাক্ষ্য দেয়া যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল (২) নামায কায়িম করা (৩) যাকাত দেয়া (৪) হজ্জ করা এবং (৫) রমাদ্বান শরীফ উনার রোযা রাখা। (বুখারী শরীফ)
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ لَهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ ﴿٢٧٧﴾
اَلَّذِينَ لا يُؤْتُونَ الزَّكٰوةَ وَهُم بِالٰاخِرَ‌ةِ هُمْ كٰفِرُ‌ونَ.
অর্থ : যারা পবিত্র যাকাত প্রদান করে না, আর তারাই পরকাল অবিশ্বাসী।
(পবিত্র সূরা হা-মীম সাজদাহ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৭)। অর্থাৎ তারা কাফির।
والزَّكَوةُ بُرْهَانٌ
অর্থ : “যাকাত হচ্ছে (সম্মানীত ঈমান উনার) দলীল”।
(পবিত্র নাসায়ী শরীফ)
عَنْ أُبَىِّ بْنِ كَعْبٍ، قَالَ بَعَثَنِي النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مُصَدِّقًا فَمَرَرْتُ بِرَجُلٍ فَلَمَّا جَمَعَ لِي مَالَهُ لَمْ أَجِدْ عَلَيْهِ فِيهِ إِلاَّ ابْنَةَ مَخَاضٍ فَقُلْتُ لَهُ أَدِّ ابْنَةَ مَخَاضٍ فَإِنَّهَا صَدَقَتُكَ ‏.‏ فَقَالَ ذَاكَ مَا لاَ لَبَنَ فِيهِ وَلاَ ظَهْرَ وَلَكِنْ هَذِهِ نَاقَةٌ فَتِيَّةٌ عَظِيمَةٌ سَمِينَةٌ فَخُذْهَا ‏.‏ فَقُلْتُ لَهُ مَا أَنَا بِآخِذٍ مَا لَمْ أُومَرْ بِهِ وَهَذَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِنْكَ قَرِيبٌ فَإِنْ أَحْبَبْتَ أَنْ تَأْتِيَهُ فَتَعْرِضَ عَلَيْهِ مَا عَرَضْتَ عَلَىَّ فَافْعَلْ فَإِنْ قَبِلَهُ مِنْكَ قَبِلْتُهُ وَإِنْ رَدَّهُ عَلَيْكَ رَدَدْتُهُ ‏.‏ قَالَ فَإِنِّي فَاعِلٌ فَخَرَجَ مَعِي وَخَرَجَ بِالنَّاقَةِ الَّتِي عَرَضَ عَلَىَّ حَتَّى قَدِمْنَا عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ لَهُ يَا نَبِيَّ اللَّهِ أَتَانِي رَسُولُكَ لِيَأْخُذَ مِنِّي صَدَقَةَ مَالِي وَايْمُ اللَّهِ مَا قَامَ فِي مَالِي رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَلاَ رَسُولُهُ قَطُّ قَبْلَهُ فَجَمَعْتُ لَهُ مَالِي فَزَعَمَ أَنَّ مَا عَلَىَّ فِيهِ ابْنَةُ مَخَاضٍ وَذَلِكَ مَا لاَ لَبَنَ فِيهِ وَلاَ ظَهْرَ وَقَدْ عَرَضْتُ عَلَيْهِ نَاقَةً فَتِيَّةً عَظِيمَةً لِيَأْخُذَهَا فَأَبَى عَلَىَّ وَهَا هِيَ ذِهِ قَدْ جِئْتُكَ بِهَا يَا رَسُولَ اللَّهِ‏.‏ خُذْهَا فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ ذَاكَ الَّذِي عَلَيْكَ فَإِنْ تَطَوَّعْتَ بِخَيْرٍ آجَرَكَ اللَّهُ فِيهِ وَقَبِلْنَاهُ مِنْكَ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ فَهَا هِيَ ذِهِ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَدْ جِئْتُكَ بِهَا فَخُذْهَا ‏.‏ قَالَ فَأَمَرَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِقَبْضِهَا وَدَعَا لَهُ فِي مَالِهِ بِالْبَرَكَةِ ‏.
অর্থ : “হযরত উবাই ইবনে কাআ’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে যাকাত আদায় করার জন্য প্রেরন করলেন। আমি এক ব্যক্তির কাছে পৌছলাম। তিনি আমার সামনে উনার সম্পদ হাজির করলেন। সে সম্পদ ছিলো এতটুকু যে উনার উপর একটি এক বছরের উট যাকাত দেয়া জরুরী ছিলো। আমি বললাম, এক বছরের একটি বাচ্চা উষ্ট্রী দিয়ে দিন। তিনি বললেন, সে তো দুধও দিবে না এবং তার উপর সওয়ারও হওয়া যাবে না। কাজেই আমার এই উস্ট্রী গ্রহণ করুন এটি যৌবনে পদার্পন করেছে এবং এটি মোটা তাজা রয়েছে। অতএব আপনি এটিই গ্রহণ করুন।
হযরত উবাই ইবনে কাআ’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক অনুমতি ছাড়া এটি গ্রহণ করতে পারবো না। তবে তিনি আপনার নিকটে পবিত্র মদীনা শরীফ অবস্থান মুবারক করছেন। আপনি ইচ্ছা হলে আপনার যে উট আমাকে দিতে চেয়েছেন, তা উনার কাছে পেশ করতে পারেন। যদি তিনি গ্রহণ করেন তাহলে আমিও তা গ্রহণ করবো। আর যদি তিনি গ্রহণ না করেন, তাহলে আমিও গ্রহণ করবো না। অতঃপর তিনি তৈরি হলেন এবং উটটি নিয়ে আমার সাথে ওয়ানা হলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট উপস্থিত হয়ে তিনি বললেন, হে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার নিয়োজিত উসূলকারী আমার কাছে যাকাত আদায়ের উদ্দেশ্যে এসেছিলেন। আর মহান আল্লাহ পাক উনার শপথ! প্রথমবারের মতো কেউ আপনার পক্ষ থেকে আমার কাছে আসলো। আমি উনার সামনে আমার সম্পদ পেশ করলে তিনি বললেন এক বছরের একটি বাচ্চা উট দিন। অথচ সেটি না দুধ দিবে না তার উপর সাওয়ার হওয়া সম্ভব হবে।
আমি বললাম, এটি মোটা তাজা যুবক উট এটিই গ্রহণ করুন। কিন্তু তিনি নিচ্ছেন না। এখন আমি সেই উট নিয়ে আপনার কাছে হাজির হলাম। আপনি তা সানন্দে গ্রহণ করুন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আপনার উপর ওয়াজীব ছিলো তাই যা তিনি বলেছেন। কিন্তু যদি আপনি নিজের খুশিতে ভালোকাজ করতে চান তাহলে মহান আল্লাহ পাক আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিবেন। আর আমরাও তা গ্রহণ করবো। তিনি বললেন- এই উট উপস্থিত এটিই গ্রহণ করুন।
সুতরাং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেটি গ্রহণ করার নির্দেশ মুবারক দিলেন এবং উনার সম্পদ বরকতের জন্য দুআ মুবারক করলেন। (সহীহ সুনানে আবু দাউদ শরীফ, প্রথম খণ্ড)
وَأَقِيْمُوْا الصَّلَاةَ وَاٰتُوْا الزَّكَاةَ وَمَا تُقَدِّمُوْا لِأَنْفُسِكُمْ مِّنْ خَيْرٍ تَجِدُوْهُ عِندَ اللهِ اِنَّ اللهَ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيرٌ
“তোমরা নামায কায়িম করো, যাকাত আদায় করো। আর তোমরা নিজেদের জন্য যে উত্তম আমল করে থাকো তার প্রতিদান মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট পাবে।
নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমরা যে সমস্ত নেক আমল করে থাকো তা দেখেন।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১১০)
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে সরাসির যাকাত শব্দ ৩২ বার, ইনফাকা শব্দ ৪৩, ছদকা শব্দ ৯ বার মোট ৮৪ বার এসেছে। এছাড়া খরচ করার হিসেবে প্রায় ১৫০ বার এসেছে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি রিযিকের মালিক, তিনি যাকাত ব্যবস্থাপনা দিয়েছেন, একমাত্র পবিত্র যাকাত উনার মাধ্যমেই অর্থনৈতিক মুক্তি ও স্বচ্ছলতা আসে এবং আত্মিক পরিতৃপ্তি অর্জন হয়। কুদরতী ফায়সালা হবে, চাহিদাতো মিটবেই সম্পদ বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। যখনই যাকাত জারী হয়েছে তখন ঘরে ঘরে লক্ষ লক্ষ দিনার-দিরহাম।
হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেছেন, উনারা কাফতানের কাপর দিয়ে নাক মুবারক মুছেছেন। সুবহানাল্লাহ!
وَمَا آتَيْتُم مِّن زَكَاةٍ تُرِيدُونَ وَجْهَ اللَّـهِ فَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْمُضْعِفُونَ ﴿٣٩﴾
অর্থ : “আর তোমরা যারা যাকাত দ্বারা মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি কামনা কর; তারাই ঐ সম্পদ বহুগুণ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হবে।” (পবিত্র সূরা রূম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৯)